মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন ও ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী মনির হোসেনের বিরুদ্ধে অপ-প্রচারের প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, কাজী মনির হোসেন। বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) টোরাগড় গ্রামে পৌর ৭ ও ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
হাজীগঞ্জ পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর মিনু আক্তার কর্তৃক গত ৩১ অক্টোবর ও ১ নভেম্বর তার ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পৌরসভার মেয়র ও ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে একাধিক পোস্ট ও লাইভ এসে আপত্তিকর ও মানহানিকর বক্তব্য তুলে ধরে বিভিন্ন অভিযোগ করেন।
সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিনু আক্তারের উক্ত বক্তব্য ও অভিযোগের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে কাউন্সিলর কাজী মনির হোসেন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তার বক্তব্য তুলে ধরেন। হাজীগঞ্জ প্রেসকাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় কাজী মনির হোসেন বলেন, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিনু আক্তার উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়ে তার ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক আইডিতে পৌর মেয়র ও আমার নামে মানহানীকর, কুরুচিপূর্ণ ও আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। যার কোন সত্যতা নেই এবং এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
প্রকৃতপক্ষে একটি সালিশি বৈঠকের প্রতিবেদন মিনু আক্তারের পরিবারের পক্ষে না দেওয়ায়, তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে পৌর মেয়র ও আমার নামে মিথ্যা অপ-প্রচার করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্পত্তিগত বিরোধের জেরে জনৈক মহরম আলীসহ চারজন ব্যক্তি বাদী হয়ে পৌর মেয়রের নিকট লিখিত অভিযোগ (নং- ১৯৫/২০২২) দায়ের করেন।
ওই অভিযোগের ২নং বিবাদী ছিলেন, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিনু আক্তারের বাবা আনোয়ার হোসেন ছিডা। অভিযোগের বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও আমাকে (৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর) দায়িত্ব প্রদান করেন পৌর মেয়র। দায়িত্ব পেয়ে আমরা বাদী ও বিবাদী পক্ষকে পরপর তিনটি নোটিশ প্রদান করি।
তিনি বলেন, প্রথম নোটিশ পাওয়ার দুই পক্ষের সালিশদার ও দুই কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে প্রথম সালিশি বৈঠকে বিবাদী মিনু আক্তারের বাবা আনোয়ার হোসেন ছিডা ও তার ভাই তাদের স্বপক্ষের কোন দলিল বা কাগজপত্র না এনে বাদী পক্ষের সাথে অশালীন আচরণ করেন। তাদের অসহযোগিতার কারণে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি।

পরবর্তীতে দ্বিতীয় নোটিশের পর দ্বিতীয় সালিশি বৈঠকেও আবারো নিজেদের স্বপক্ষে কোন দলিল বা কাগজপত্র না এনে সালিশদারদের উপস্থিতিতে বাদী পক্ষের সাথে আবারো অশালীন আচরণ করেন মিনু আক্তারের বাবা ও ভাই। তাদের এমন অসহযোগিতার কারণে দ্বিতীয় বৈঠকটিও সম্পন্ন হয়নি। এরপর তৃতীয় নোটিশ করা হয়।

তৃতীয় নোটিশের প্রেক্ষিতে অনুষ্ঠিত তৃতীয় বৈঠকে বাদী পক্ষ উপস্থিত হলেও মিনু আক্তারের বাবাসহ বিবাদী পক্ষের কেউই উপস্থিত হননি। এরপর আমরা বিধি অনুযায়ী একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করি। ওই প্রতিবেদনটি পৌরসভার উচ্চমান সহকারী মো. আব্দুল লতিফ কম্পিউটারে কম্পোজ করে প্রিন্ট করেন।
এ সময় মিনু আক্তার উত্তেজিত হয়ে আব্দুল লতিফের হাত থেকে প্রিন্টকৃত প্রতিবেদনটি জোরপূর্বক কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেন এবং উচ্চস্বরে অশালীন ও অসলগ্ন কথা-বার্তা বলতে থাকেন। আব্দুল লতিফ বিষয়টি পৌর মেয়রকে অবহিত করেন। এরপর থেকেই মিনু আক্তার পৌর মেয়র ও আমার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন।
কাজী মনির আরো বলেন, মিনু আক্তার নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই সেবার নামে বা সেবার বিনিময়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা নেন এবং পৌরসভার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে অশালীন আচরণ করেন। এসব বিষয় নিয়ে তাকে সর্তক ও সচেতন করার জন্য পৌর মেয়র মৌখিকভাবে আমাকে ও তার নির্বাচিনী ওয়ার্ডের আরো দুইজন কাউন্সিলরকে বেশ কয়েকবার দায়িত্ব দেন। আমরাও তাকে বেশ কয়েকবার সর্তক করি।
কিন্তু মিনু আক্তার সচেতন হননি। সবশেষ তিনি ওই সালিশি বৈঠকের প্রতিবেদনটি ছিঁড়ে ফেলায় এবং উচ্চমান সহকারীর সাথে অশালীন আচরণ করায় পৌর মেয়র তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। তিনি কারণ দর্শাণোর নোটিশ পেয়ে নোটিশের সন্তোষজনক জবাব না দিয়ে উল্টো ওই নোটিশে আমার বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। পরবর্তীতে তিনি প্রায় দুই মাস পৌরসভা কার্যালয়ে আসেননি।
সবশেষ গত ৩১ অক্টোবর পৌরসভার মাসিক সভায় উপস্থিত হয়ে মিনু আক্তার উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়ে হাজিরা শীটে স্বাক্ষর না করে উচ্চস্বরে ও অশালীন কথা-বার্তা বলেন। পরে পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মিনু আক্তারসহ অপর তিনজন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরকে নিয়ে বসেন এবং তিনি তাকে বিভিন্ন পরামর্শ দেন। এ সময় তিনি অনুতপ্ত হয়ে আর এমনটি হবে না বলে উল্লেখ করেন। এরপর তিনি তার বাসায় চলে যান।
কিন্তু ওই দিন বিকালেই (৩১ অক্টোবর) আনুমানিক ৫টা ৪০ মিনিটে মিনু আক্তার তার ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসুবকে তাঁর ও পৌর মেয়র এবং আমার ছবি দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মানহানীকর, কুরুচিপূর্ণ ও আপত্তিকর মন্তব্য করে একটি পোস্ট দেন। এর পরের দিন (১ নভেম্বর) তিনি দুপুর সাড়ে ১২টায় লাইভে এবং ্একই দিনে সন্ধ্যা ৭ টা ২৫টি আরেকটি পোস্ট দিয়ে আবারো আমাদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করেন।
এ সময় প্রশাসন ও সংবাদকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, আমি এর প্রতিকার চাই। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, প্যানেল মেয়র-২ ও ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজাদ হোসেন মজুমদার, সংরতি নারী কাউন্সিলর মমতাজ বেগম মুক্তা ও ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাজী কবির হোসেন কাজী।

একই সময়ে সাবেক কাউন্সিলর ও এলাকাবাসীর পে বক্তব্য রাখেন, ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. সিরাজুল ইসলাম সিরাজ খাঁন ও এমরান হোসেন মুন্সী, পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাজী মনির হোসেন মিঠু, সাংগঠনিক সম্পাদক আহচান উল্যাহ্ মৃধা, শিক্ষক জহিরুল ইসলাম মজুমদার। তারা তাদের বক্তব্যে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিনু আক্তারকে ভুলপথ থেকে ফিরে আসা এবং তাকে অনুতপ্ত হওয়ার আহবান জানান।