দেশের শতভাগ বিদ্যুতায়ন উপজেলা সমূহের অন্যতম একটি হচ্ছে শাহরাস্তি । অথচ শাহরাস্তিবাসি বিদ্যুতের হয়রানিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে কোন কোন এলাকা থেকে দিনে পাঁচ থেকে ছয় বার বিদ্যুৎ চলে যায় । আবার কোন কোন এলাকায় দিনে রাতে ১৪ হতে ১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকেনা। শাহরাস্তির জনগণের এত দুঃখ দুর্দশা বিদ্যুৎ নিয়ে, এসব দেখার কেউ নেই!

গত কয়েক দিন যাবত এলাকাবাসীর অসংখ্য অভিযোগ ও ও সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এলাকার পাঠক সমাজের জন্য আজকের এই বিশেষ প্রতিবেদন।

অনেক এলাকায় দিনে-রাতে দীর্ঘ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না। তীব্র গরমে বয়োবৃদ্ধ ও অসুস্থদের সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। লোডশেডিং না থাকলেও বিভ্রাটের কারণেই জনদুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ট্রান্সফরমারে ফেজ চলে যাওয়ার ফলেই এমনটি ঘটছে। এ কারণে একেকটি এলাকায় একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে আসতে সময় লেগে যাচ্ছে কয়েকে ঘন্টা। আবার কোন কোন এলাকায় এ ধরনের সমস্যার কারণে ২/৩ ঘন্টা ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে।

যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দফায় দফায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ অস্থিতিশীল হয়ে পড়ার কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। গ্রীষ্মে রোদের তাপ বাড়ার সাথে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট বেড়ে যায়।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে,গত ২ মাস ধরে বেশকিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলছে। তীব্র গরম আর বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রায় পাঁচ থেকে ছয়বার বিদ্যুৎ চলে যায়। বিদ্যুৎ না থাকায় মাহে রমজানের রোজাদারদের ইফতার ও সেহারিতে ও বিষন কষ্ট পাচ্ছে। স্কুল কলেজে পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীদের লেখাপড়ায় দারুন ব্যাঘাত ঘটছে। ব্যবসা বাণিজ্যে ও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অনলাইনে আবেদন, ফটোকপি, কম্পিউটার কম্পোজসহ বিভিন্ন কাজে সমস্যা হচ্ছে।

মামুন নামের এক গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, গত কয়েক দিন ধরেই আমাদের এলাকায় বিদ্যুতের ঘন ঘন বিভ্রাট হচ্ছে। ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বিদ্যুতের সমস্যায় জর্জরিত বলে তিনি এই প্রতিবেদক কে জানান।

কবির নামের সূচীপাড়ার এক বাসিন্দা বলেন, বিদ্যুৎ সমস্যা আমরা হিমশিম খাচ্ছি। ঘন্টার পর ঘন্টা আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ থাকেনা। আবেদন-নিবেদন অভিযোগ করেও কোন ফল পাওয়া যায় না।
রাগৈ গ্রামের খাজা বলেন, প্রতিদিন অন্তত ছয় থেকে সাত বার আমাদের এলাকা থেকে বিদ্যুৎ চলে যায়। সামান্য বৃষ্টির আবাশ পেলেই বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঝড় তুফান হলে তিন থেকে চার দিন বিদ্যুৎ থাকেনা।

সূচীপাড় উত্তর ইউনিয়নের পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক শাহাজান বলেন,বিদ্যুতের জন্য এলাকায় শুরু হয়ে গেছে হা-হা কার। আমাদের ফ্রিজের খাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মুসুল্লিরা অসহ্য গরমের কারণে মসজিদে অনেক সময় নামাজ আদায় করতে পারছে না। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীরা ঠিকমতো করতে পারছে না লেখাপড়া।
রিভার ভিউ কফি হাউজের পরিচালক মামুন হোসেন বলেন, শাহরাস্তি উপজেলায় সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে আমাদের এলাকায়। ঘন্টার পর ঘন্টা এ এলাকায় বিদ্যুৎ থাকেনা। বিদ্যুৎ না থাকার ফলে সন্ধ্যার পর বিভিন্ন গ্রামে, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মেহের দক্ষিণ ইউনিয়নের কবির হোসেন বলেন, বেশিরভাগ এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং থাকে।

সূচীপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক আনোয়ার বলেন, বিদ্যুৎ সমস্যা আমাদের ইউনিয়ন বাসী অতিষ্ঠ। প্রতিদিন কয়েকবার এ এলাকা থেকে বিদ্যুৎ চলে যায়।

পৌরসভার সাবেক কমিশনার শাহাবুদ্দিন বলেন, আমাদের শাহরাস্তি উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের একটা নীতি রয়েছে। যখন আমাদের এলাকায় কোন প্রোগ্রাম হয়, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের আগমন ঘটে, তখন নির্বিঘ্নে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। প্রোগ্রাম শেষ হবার সাথে সাথে বিদ্যুৎ চলে যায়।

চিতোষিপশ্চিম ইউনিয়নের বাসিন্দা হারুনুর রশীদ বলেন, বিদ্যুতের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ আমরা। আমাদের এই সমস্যা, বিদ্যুৎ নিয়ে আমাদের এত ভোগান্তি এত যন্ত্রনা দেখার কেউ নেই। তিনি বলেন প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ বার আমাদের এলাকা থেকে বিদ্যুৎ চলে যায়। বিশেষ করে রাতে ৩/৪ ঘন্টা একসাথে বিদ্যুৎ থাকে না।

পল্লী বিদ্যুৎ নিয়ে এলাকাবাসীর এত সমস্যার বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য অফিসের মোবাইল ফোনে কল করা হলে প্রথমে কয়েকবার কল প্রবেশ করে, কিন্তু তিনি তা রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে তিনি মোবাইল বন্ধ করে দেন।